সংবাদ শিরোনাম :
*মানিকগঞ্জে আওয়ামী লীগ নেতাদের বালু ব্যবসার হাল ধরেছে বিএনপির নেতারা*

*মানিকগঞ্জে আওয়ামী লীগ নেতাদের বালু ব্যবসার হাল ধরেছে বিএনপির নেতারা*

 

মশিউর রহমান স্টাফরির্পোটার:
আত্মগোপনে থাকা প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতাদের নামে ইজারাকৃত বালু মহালের হাল ধরেছে বিএনপি নেতারা। অপরিকল্পিতভাবে (খননযন্ত্র) ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের ফলে নদী তীরবর্তী এলাকায় হুমকিতে রয়েছে শিল্প কারখানা, কৃষিজমি, ঘরবাড়িসহ বিভিন্ন স্থাপনা। মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপি’র শীর্ষ নেতাদের পরোক্ষ মদদে কেন্দ্রীয়  নির্দেশনা অমান্য করে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার দোসরদের সাথে আতাত করে বালু ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছে স্থানীয় বিএনপি’র বিভিন্ন পর্যায়ের অর্থলোলুপ নেতারা। এতে জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এসব কাজে দলীয় ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হওয়ার আশঙ্কা করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহল।

জানাগেছে, মানিকগঞ্জ পৌরসভার বেউথা বালুমহালের ইজারাদার জেলা সেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি এ্যাড আবু বকর সিদ্দিক খান তুষার, তরা বালুমহালের ইজারাদার সাবেক স্বাস্থ্য মন্ত্রী জাহিদ মালেকের আপন ফুফাতো ভাই শামীম হোসেন এবং তরা আরেকটি বালুমহালের ইজারাদার মানিকগঞ্জ-১ আসনের সাবেক সংসদ সদদ্য সালাউদ্দিন মাহমুদ জাহিদের মামাতো ভাই মাকছুদ। এরা গত ১৬ বছর আওয়ামী লীগের প্রভাব বিস্তার করে এসব বালুমহালের ইজারা নিয়ে অবৈধভাবে নদী থেকে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করে কোটি কোটি হাতিয়ে নিয়েছেন। ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ত্যাগের পর অল্প কিছুদিন বালু উত্তোলন বন্ধ থাকে। এখনও এসব বালুমহালের ইজারাদার আওয়ামী লীগের নেতারা পলাতক রয়েছে। কিন্তু অদৃশ্য ক্ষমতার মাধ্যমে তাদের বালু ব্যবসায় পুনরায় চালু হয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মানিকগঞ্জের সদর উপজেলার জয়নগর এলাকায় কালীগঙ্গা নদীতে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। আর এসব বালু বিভিন্ন পয়েন্টে বিক্রি হচ্ছে। এবং তরা ব্রীজের পশ্চিমে নদীতে ড্রেজার দিয়ে সকাল সন্ধ্যা বালু তোলা হচ্ছে। আর এসব বালু বাল্কহেডের মাধ্যমে নদী পথে বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করা হচ্ছে।

তরা গ্রামের মারিয়া বেগম বলেন, স্বৈরাচারের পতন হলেও তাদের বালু মহাল বন্ধ হয়নি। অবৈধ ড্রেজারের কারণে আমাদের ফসলি জমি ভেঙে গেছে। মাটি কাটার ফলে স্কুল, শিল্প কারখানা, শ্মশানসহ হুমকিতে পরেছে বসতভিটা। আমরা এসবের প্রতিকার চাই।

মানিকগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জেলা যুবদলের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি গোলাম মোহাম্মদ রফি অপু বলেন, রাজনৈতিক অঙ্গনে আওয়ামী লীগ- বিএনপির কঠোর বিরোধ থাকলেও বালু ব্যবসায় দুই দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে সৌহার্দ্য রয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতাদের বন্ধ থাকা বালু ব্যবসার হাল ধরেছে বিএনপির নেতাকর্মীরা। এতে একদিকে যেমন বেপরোয়া হয়ে উঠছে নদী থেকে অবৈধ ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন, অন্যদিকে, ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে জেলা বিএনপি’র। কেন্দ্রীয় বিএনপির নেতাকর্মীদের কাছে অনুরোধ তদন্তপূর্বক এসব অর্থলোভী নামধারী বিএনপি নেতাদের শাস্তির আওতায় আনার দাবী করেন তিনি। সেইসাথে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার জোর দাবী করেন তিনি।

আওয়ামী লীগের নেতা এবং তরা বালুমহালের ইজারাদার শামীম হোসেনের ম্যানেজার বজলু বলেন, আমরা ইজারা নিয়ে বালু উত্তোলন করছি। বালুমহালের নিয়ম অনুযায়ী বর্ষামাসে নদী থেকে বালু উত্তোলন করা যাবে। সেই নিয়ম অনুযায়ী আমরা ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করছি।

এবিষয়ে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এস এ জিন্নাহ কবির বলেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সরকারি কোষাগারে টাকা জমা দিয়ে এসব বালুমহালের ইজারা নিয়েছে। তাদের এই ব্যবসার সাথে আমাদের ছাত্রদল যুবদলের কোন নেতাকর্মী জড়িত নাই। অবৈধ কোন ব্যবসায় আমাদের দলের নেতাকর্মীরা জড়িত হলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠিনক ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে বৈধ ব্যবসা করতে কোন বাধা নেই।

মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসক ড. মনোয়ার হোসেন মোল্লা গণমাধ্যমকে বলেন, সরকারি কোষাগারে টাকা জমা দিয়ে তারা বালুমহালের ইজারা নিয়েছেন। তবে যদি বালুমহালের ইজারা আইন ভেঙ্গে বালু উত্তোলন করা হয় তাহলে মোবাইলকোর্টের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Facebook Comments Box





© স্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ দৈনিক নাগরিক বাণী